
জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের দলটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সেলগুলোকে’ অর্থ পাঠাত বলে তথ্য দিয়েছেন দেশটির পুলিশ প্রধান।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল।
তিনি বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়; তারা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে খালিদ ইসমাইল বলছেন, বাংলাদেশিদের ওই চক্রটি অন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে থেকে সদস্য বাড়াচ্ছিলেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ‘উগ্রবাদী মতাদর্শ’ ছড়াচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, এই চক্র আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘আইএসের জন্য’ অর্থ পাঠাত। মালয়েশিয়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশন অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে।
“তারা ঠিক কত অর্থ সংগ্রহ করেছে তা এখনও তদন্তাধীন। আমাদের ধারণা, সদস্য ফি এবং চাঁদা থেকেই এই অর্থ এসেছে।”
পুলিশের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়া স্টার লিখেছে, ‘গেরাকান মিলিটান র্যাডিকাল বাংলাদেশ’ বা ‘জিএমআরবি’ নামে পরিচিত এই চক্র হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো অ্যাপে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্র মতবাদের প্রচার করে আসছিল।
খালিদ ইসমাইল বলেন, “আমাদের ধারণা, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের সদস্য সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জনের মত। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৫০০ রিংগিত ফি দিতে হয়। তবে অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করছে সদস্যদের ওপর।”
আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইএস সেলগুলোর সঙ্গে এই চক্রের কোনো সংযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনও তদন্ত চলছে।”
মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান বলেন, “আমরা অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে এই জঙ্গি নেটওয়ার্ক উন্মোচনে কাজ করছি।”
আটকদের মধ্যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জাড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ১৬ জন এখনো পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন খালিদ ইসমাইল।
তিনি বলেন, “যাদের সংশ্লিষ্টতা কম, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর যাদের সম্পৃক্ততা বেশি, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইলের বরাত দিয়ে ৩৬ বাংলাদেশিকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর প্রথম সংবাদমাধ্যমে এসেছিল গত ২৭ জুন।
তিনি বলেছিলেন, আটক বাংলাদেশিদের ওই দলটি আইএসের মতাদর্শ মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল এবং নিজেদের ভেতরে সদস্য নিয়োগের সেল গঠন করেছিল।
“এই সেলগুলো উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং নিজের দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনায় কাজ করছিল।”
রয়টার্স লিখেছে, মুসলিম-অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে আইএসের এক হামলার পর থেকে শত শত সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঞ্চলিক অভিযান জোরদার হওয়ার পর এ ধরনের গ্রেপ্তারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
শিল্প, খামার ও নির্মাণ খাতে শ্রমিক ঘাটতি পূরণে মালয়েশিয়া ব্যাপকভাবে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমান।