০৯ অক্টোবর ২০২৫ , ২২ আশ্বিন ১৪৩২ 

শিক্ষা

শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড়

এক মন্ত্রীর ভাগনে আরেক মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের তদন্তে! 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৮ অক্টোবর ২০২৫

এক মন্ত্রীর ভাগনে আরেক মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের তদন্তে! 

শিক্ষা প্রশাসনে নজিরবিহীন এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এক সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তদন্তকারী দলে থেকে একই দলের আরেক সাবেক মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তদন্তের দায়িত্বে। ঘটনাটি ঘটেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)-এ। 

ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে ডিআইএ-তে কর্মরত আছেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ভাগনে হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। সম্প্রতি তার নিয়োগ ও প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সরকারি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে। ডিআইএর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও এ সম্পর্কে অবহিত। 

ডিআইএর মূল দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করা। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

সূত্র বলছে, চলমান তদন্ত কার্যক্রমের মধ্যেই মনিরুল ইসলামকে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারের নিয়ন্ত্রিত মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের তদন্ত দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ডিআইএ কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

ডিআইএর নথি অনুযায়ী, মিরপুরে অবস্থিত মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে তদন্তের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে ডিআইএ কর্তৃপক্ষ। এতে প্রধান তদন্তকারী হিসেবে রয়েছেন শিক্ষা পরিদর্শক আবু দাউদ। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক রোকনুজ্জামান খান, মনিরুল ইসলাম, অডিট অফিসার ফিরোজ হোসেন এবং অডিটর শাহপরান মিয়া। 

জানতে চাইলে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “এমন ঘটনা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিআইএ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মনিরুল ইসলামকে এই তদন্ত দলে রাখা হয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ জড়িত। ”

তারা আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একজন সাবেক মন্ত্রীর ভাগনেকে কেন এখনো ডিআইএ-তে রাখা হয়েছে, সেটিই কোটি টাকার প্রশ্ন। ”

ডিআইএর রেকর্ড অনুযায়ী, মনিরুল ইসলামকে ২০১৬ সালে সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক পদে পদায়ন করা হয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সময়। এ নিয়োগে মুখ্য ভূমিকা রাখেন শাজাহান খান। তার ডিও লেটার ও মৌখিক সুপারিশে পদায়ন পান মনিরুল। 

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে শাজাহান খানের ভাগনে পরিচয়ে প্রভাব খাঁটিয়ে তিনি পদে বহাল ছিলেন। এমনকি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও তাকে অন্য দপ্তরে বদলি করতে পারেননি। 

সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎই রাজনৈতিক অবস্থান বদলে ‘জাতীয়তাবাদী আদর্শের’ লোক দাবি করছেন মনিরুল ইসলাম—এমন অভিযোগও উঠেছে। ডিআইএর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, “এ দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও প্রভাব বিস্তারের কৌশল। ”

অভিযোগ আরও আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিটের নামে বিগত বছরগুলোতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। ডিআইএর কর্মকর্তাদের ভাষায়, “এটা এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ”

মনিরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি ও তার পরিবার বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তার স্ত্রীও আওয়ামী প্রভাব খাঁটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করছেন।