
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেলের প্রার্থীরা। এই চারটি প্যানেল হলো ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের কথা জানান তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।
এর আগে ভোটে কারচুপিসহ নানা অভিযোগ তুলে জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা। ছাত্রদলের বর্জন ঘোষণার পরপরই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায়। পুলিশের পাশাপাশি বিশমাইল গেইটে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করতে দেখা যায়। এরপরই নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরাও। এ বিষয়ে ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও নির্বাচন মনিটরিং টিমের সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, “একটি বিশেষ দল ‘উগ্রপন্থী’ আচরণ করেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে; অতিরিক্ত ব্যালট ছাপিয়ে তারা বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করেছিল।”
লিখিত বক্তব্যে শরণ এহসান বলেন, গতকাল রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে হট্টগোল থেকে শুরু করে রাত দুইটাই পোলিং এজেন্টের ঘোষণা দেওয়া, তার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ম্যানেজ করতে না পারা, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেওয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই দায় কেবল এবং কেবলমাত্র এই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নতুন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ৩৩ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় গ্রহণ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৫ জন।
জাকসুতে এবার মোট ভোটার ১১,৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬১১৫, ছাত্রী ৫৭২৮। একজন ভোটার ভোট দেবেন ৪০টি করে; কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি, হল সংসদে ১৫টি পদে।
এবার জাকসু ভোটের মোট প্রার্থী ১৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ১৩২ জন, নারী প্রার্থী ৪৬ জন। এখানে পদের সংখ্যা ২৫টি।
মোট ২১টি হল সংসদে পদের সংখ্যা ৩১৫টি। প্রতি হলে পদ সংখ্যা ১৫টি। মোট ৪৪৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ ছাত্র হলের প্রার্থী সংখ্যা ৩১৬ জন এবং ১০ ছাত্রী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৩১ জন।
জাকসুর প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭২ সালে। সবশেষ নবম জাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯২ সালের ৬ জুলাই।