০৯ অক্টোবর ২০২৫ , ২২ আশ্বিন ১৪৩২ 

জাতীয়

সাবেরের বাসায় বৈঠক নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সাবেরের বাসায় বৈঠক নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় বৈঠক নিয়ে সরকারের ‘কিছু বলার বা করার নেই’ বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৈঠক করেছেন, সংবাদমাধ্যমে আসা এই খবরের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই দাবি করেন।

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যেভাবে দেখছি তা হল, তারা তো একজন ব্যক্তির বাসায় গিয়েছেন। তিনি যদি অপরাধী হতেন তাহলে তো তাকে কাস্টডিতে রাখা হতো, সেটা তো হয়নি। রাষ্ট্রদূতরা যে কারো বাসায় যেতে পারেন।”

তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি তো কলকাতায় রাষ্ট্রদূত না, এক ধাপ নিচে ছিলাম, আমি কিন্তু যে কারো বাসায় গিয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি।

“তবে তারা (তিন রাষ্ট্রদূত) কি নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন, এসবের ফলাফল কী, এগুলো নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকতে পারে। তবে এমনিতে সেখানে গেছেন তারা, এগুলো নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।”

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পর গত বছরের ৬ অক্টোবর ঢাকার গুলশান থেকে সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিএনপি কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বিচারক। পাশাপাশি খিলগাঁও থানার দুই হত্যা মামলা এবং হত্যাচেষ্টার আরও দুই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সেদিন শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে সাবের হোসেনের ওপর হামলা চালিয়েছিল একদল ব্যক্তি।

তবে ৮ অক্টোবর ছয় মামলায় জামিন দিয়ে তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার হওয়া ১৮৮ জনকে প্রধান উপদেষ্টা অনুরোধ করে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এরপরে আবার ২৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন কারাবন্দি অবস্থায় ২২ দিন আগে মারা গেছেন। সেই খবর মাত্র গতকাল দেশে এসেছে। এ বিষয়টি উপদেষ্টা জানেন কি না?

জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “কারাগারে আসলে বাংলাদেশের অনেক মানুষ আছে। এখন তারা কীভাবে ‘ক্যাটাগোরাইজ’ করেছে তা বলা মুশকিল। আর এসব বিষয়ে তাদের (আরব আমিরাত) কাছ থেকে বিস্তারিত উত্তর পাওয়াও যায় না।

“তবে যেহেতু রাস্তায় মিছিল করার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন একটা খুবই ‘আনইউজুয়্যাল ওয়েতে’ আমাদের প্রধান উপদেষ্টা আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানকে ফোন করে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর বাকিদের ব্যাপারে স্বাভাবিক যে পদ্ধতি- চিঠি লেখা, নোট দেওয়া, আমরা সেগুলো অনুসরণ করে যাচ্ছি। দেখা যাক সব পরিষ্কার করা যায় কি না।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচনে ফিলিস্তিনকে সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে কি না বা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এই বিষয়টাতে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, আপনাদের যত আগ্রহ, বাংলাদেশের যত আগ্রহ, ফিলিস্তিনের কিন্তু এত আগ্রহ নেই।

“নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে এবং সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিন মুখোমুখি হবে না।”

গেল অগাস্টে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি নামিয়ে নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে লেখা এক চিঠিতে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমার মনে হয় এ বিষয়ে আমরা আর বেশি কিছু না করি। এটা অনেক উপরের বিষয়, উনি ওনার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।”

রাষ্ট্রপতির ছবি নামানোর জন্য কোনো আইন করা হয়েছে বা কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কোনো আইনও করা হয়নি, কোনো চিঠিও ইস্যু করা হয়নি। এমনিতে সাধারণভাবে কোনো ছবি থাকবে না এটাই হল...।”

এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “কোনো সিদ্ধান্ত নেই।”

তিনি বলেন, “এই ছবি, শুনি এক বছর আগেও কথাবার্তা হয়েছিল। আমার মনে হয়, এখানেই থেমে যাই আমরা।”

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে ভারত।

সোমবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।

এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা তাদের বিষয় নয়। ওদের এ ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।”