
চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। গত দুই দশকের মধ্যে এটি দেশের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধির হার, যা অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রোসপেক্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কাঁচামাল ও মূলধনী পণ্যের উচ্চমূল্য এবং বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে।
বিশ্ব ব্যাংকের মতে, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে শিল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থান খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একইসঙ্গে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপে ভোক্তা ব্যয় কমেছে। সুদের হার বাড়ানোর পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধির চিত্রে দেখা যায়:
কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৭৯ শতাংশ, যেখানে গত বছর ছিল ৩.৩০ শতাংশ।
শিল্প খাত কার্যত স্থবির।
সেবা খাতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও তা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি টেনে তোলার পক্ষে যথেষ্ট নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার ৩.৯৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে দুই সংস্থার মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্যের কারণে এ ব্যবধান তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংক আশা প্রকাশ করেছে, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করা যায়, তবে আগামী অর্থবছরগুলোতে ধীরে ধীরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪.৯ শতাংশ এবং ২০২৬–২৭ অর্থবছরে ৫.৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে নেপাল ও ভুটান তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে। নেপালের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ এবং ভুটানের ৭.৬ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের এ প্রতিবেদন বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়মতো অর্থনৈতিক নীতি সংশোধন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত না করা হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।