
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ‘অনৈতিক সুবিধার’ বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) জালিয়াতি করে পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ইইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রায় ৩২ কোটি টাকার কাজ ইলেকট্রো গ্লোব মিরন এন্টারপ্রাইজকে পাইয়ে দিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ফাঁস করেছেন আসাদুজ্জামান। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের মালিক যুবলীগ নেতা রাকিব হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। একই ভাবে রূপগঞ্জের পূর্বাচল মাধ্যমিক সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৫ কোটি টাকার কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক কৃষি মন্ত্রীর শ্বশুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুরানি কনস্ট্রাকশনকে পাইয়ে দিতে প্রাক্কলিত ব্যয় কমিয়ে ফাঁস করেছেন। উল্লেখ্য, এই কাজগুলোর দরপত্র কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান। সম্প্রতি একাধিক ঠিকাদার মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে এসব কাজের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান।
ইইডি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, সংস্কার এবং আসবাব সরবরাহ করে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, আইসিটি সুবিধা দেওয়ার কাজও করে থাকে অধিদপ্তরটি।
ইইডি থেকে জানা যায়, সদ্য বদলি হওয়া প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেনের ক্যাশিয়ার ছিলেন আসাদুজ্জামান। তার নেতৃত্বেই পলাতক ঠিকাদার আওয়ামী নেতা লিয়াকত শিকদারকে কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার নেতৃত্বেই দিনাজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলমের মালিকানাধীন মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজকে এখনো দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় একচেটিয়া কাজ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ—হুইপ ইকবালুর রহিমের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে তারা লাইসেন্স ভাড়া বাবদ দুই শতাংশ টাকা আদায় করছেন। যা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরও জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে ফেলেন তিনি।
সূত্র আরও বলছে, সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন আসাদুজ্জামান। কিন্তু তার পদোন্নতির এসিআরে বিরূপ মন্তব্য থাকলেও সেই এসিআর (আসল কপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়নি। অসদুপায় অবলম্বন করে ইচ্ছেমতো এসিআর টেম্পারিং করেছেন তিনি।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এসিআরে যা লেখা ছিল তাতে তার পদোন্নতি হওয়ার কথাই না। তার এসিআর যাচাই করলেই জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হবে। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান রংপুর, নাটোর, পটুয়াখালীসহ যেখানেই চাকরি করেছেন সেখানেই তিনি দুর্নীতি করে বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে সদ্য যোগদান করা তারেক আনোয়ার জাহেদীকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।