
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ফের আলোচনায় এসেছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাখা আমানতের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩৩ গুণ, যা নতুন করে প্রশ্ন তুলছে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিকল্পনার স্বচ্ছতা নিয়ে।
২০২৫ সালের হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশের নামযুক্ত হিসাবগুলোতে জমা রয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। অথচ এক বছর আগেও এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৯ লাখ ফ্রাঙ্ক।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আর্থিক ব্যবস্থাপনার ফাঁকফোকর, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক বিনিয়োগের চাহিদা কিংবা নিরাপদ সম্পদ রক্ষার প্রবণতা—সব মিলিয়ে এক জটিল অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “দেশের ভেতরে বিনিয়োগের পরিবেশে অনিশ্চয়তা থাকলে অনেকেই সঞ্চয় সরিয়ে বিদেশে নিয়ে যান। তবে বিষয়টি কতটা বৈধভাবে হয়েছে, তা যাচাই না করে অনুমান করা ঝুঁকিপূর্ণ।”
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবেই গোপনীয়তার জন্য পরিচিত। গ্রাহকের নাম, পেশা বা অর্থের উৎস প্রকাশ না করায় এই ব্যাংকগুলো অনেকসময় কর ফাঁকি, পাচার বা অপরাধজনিত অর্থ সংরক্ষণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) এক বিবৃতিতে বলেছে, "যদি বৈধভাবেই এই অর্থ স্থানান্তর হয়ে থাকে, তবে তা জানানো উচিত। আর যদি অবৈধ উপায়ে হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তদন্ত শুরু করা।”
এ বিষয়ে সরকারিভাবে এখনো কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। যদি দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বৈদেশিক ব্যাংকে অর্থ রেখেছে, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্বব্যাপী কর স্বর্গ এবং অর্থ পাচার বিরোধী আইন কঠোর হচ্ছে। OECD এবং FATF-এর মতো সংস্থাগুলো সুইস ব্যাংকগুলোর গোপনীয়তা নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এখন বাংলাদেশ চাইলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে এসব হিসাবের তথ্য চাইতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ গমন যে শুধু আর্থিক প্রশ্নই নয়, বরং নীতিনৈতিকতা, নিরাপত্তা এবং আস্থার বড় এক সংকেত বহন করে। এ বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে স্বচ্ছতা এবং কঠোর নজরদারি ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা এবং সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।