
ভারতবর্ষ
বারবার প্রত্যাখ্যাত, বারবার ফিরে আসা।
পা ও পথের সন্ধিক্ষণে ধীরে ধীরে
মরীচা লেগেছে সুতানাটি গোবিন্দপুর
কোলকাতার রূপ ও রূপশ্রীতে,
জেগে ওঠে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি-
তুমি বলো দুঃশাসন,
আমি দেখি নতুন সভ্যতার আগুনে
ঝলছে গেছে অষ্টাদশ শতকের ভারতবর্ষ;
লুণ্ঠিত সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
মণিমাণিক্য কোহিনুর বিকিয়ে দিয়ে
সবুজ মুথাঘাসে শয্যা নেন জব চার্ণক।
ওউধ ১৫৯০
খুব ভোরে হেঁসেলে আগুন হাসে
কেউবা হেঁটে আসে মেদ ঝরিয়ে
দূরে স্বয়ম্ভর সভা, জেগে ওঠে কাচের শহর
দুপায়ে দুদণ্ড দাঁড়াবার শক্তি নিয়ে দেখি,
রাতের নগরীতে বাজে ছিন্ন নূপুর
ভোজনটেবিলে লখ্নৌয়ের শাস্ত্রীয় সংগীত;
আঁধিঘর, মির্জা গালিবের পানপাত্র, সুরা ও সাকী
ভুলের মাশুল গোনে কোনো কোনো পানশালা
কোলকাতার জীবন খুলে দেয় রাতের বনিতালয়!
আমি সেই ছদ্মবেশি যাযাবর,
খুঁজে ফিরি ঘরকন্না, শ্রীমতীর চোখ।
প্রত্ন প্রেম
যতিচিহ্নের ভিড়ে গোটা বাক্য এলোমেলো
যেমন- তোমার কথারা,
রামকিঙ্করের ছেনিবাটালের ভাস্কর্য
আগুন ধরায় এই শীতে-
শীত তো নয় যেন গ্রীষ্মের খরা;
ওই আলোবিদ্যুৎ কেড়ে নেয়
পার্থিব সুখ- অন্ধকারেই
তোমাকে ভালোবাসা ভালো।
তবু নামতে পেরেছি তা বলা যাবে না
কালীঘাটের মড়া আজও দাহ হয়নি
মানুষ তাই মহোৎসবে দৌড়াচ্ছে।
আমি কী তবে উচ্ছিষ্ট ভাগাড়!
তুমি জেনে নিয়ো কনিষ্ঠ আঙুল
ধরার আগে; যখন জাগে
অন্ধ প্রত্ন প্রেম।
ডুয়ার্স/এক
আমার ভেতরের এক ট্যুরিস্ট
শণপাতায় লিখে যায় বনকথা,
ডুয়ার্সের পাথর গলে যে ঝরনা
সেই শাস্ত্রীয় সংগীতে প্রাণবন্ত
স্মৃতিঘর- প্রাণীবিদ্যা আজ ভুল
উদ্ভিদের জামা গায়ে এই মানুষগুলো;
আমি কী চা পানে মগ্ন হবো?
ব্যস্ত হয়ে ওঠে স্টেট বাস,
কাল সারারাত বন্যপ্রাণিগুলো
বলেছে সে কথা: গিরিশৃঙ্গ
ভাঙতে পারো? অথচ গাছ কাটা
হলে ভেঙে পড়ে বনভূমি-
এভাবে নির্জনতা খুন হয় রাতভর।
তাকিয়ে দেখি কীভাবে ঘন বনের
ফাঁক গলে অজস্র আলো গাছে গাছে নাচে।
ডুয়ার্স/দুই
‘রাজা ভাত’ খায়-
আলিপুরের গহিন ডুয়ার্সে
সেই রেল স্টেশন উৎকীর্ণ;
চিহ্নগুলো গাঢ়
আঙুলের স্পর্ধিত ইশারা
গেঁথে দেয় জনশ্রুতি-
আয়নার উল্টোরথে নিধুয়া পাথার
রৌদ্রস্নানের নগ্নতায় পুড়ে যায় অশত্থবন
তুমি তাকে বলো মরে যাওয়া ভ্রুণ
আমি বলি শয্যাস্পর্শপঙ্ক।
ডুয়ার্স/তিন
গেঁথে যাচ্ছে তোমার মূঢ় ছায়া
আলোপাতার শিরাউপশিরায়।
গভীর রেনট্রি দাঁড়িয়ে আছে
শিরদাঁড়া উঁচু করে।
স্বগতোক্তির মেলা এখানে,
কে কবে ছুড়ে দিয়েছে শূন্যে
আঙুলগুলো ভেজা মেঘের কার্নিশে?
আমি রোদবৃষ্টির মেঘ গায়ে মাখি
বন্ধু বনভোজনের কথা বলে:
মেয়েটি নখের ব্যাসার্ধ নিয়ে
আঁচড়ে দিয়েছিল উঁচু পাহাড়ের স্তন!
এরপর আমিও জলধারা ছুঁয়ে দিয়েছি
এখন গহিন বনের আগুনে রক্তবর্ণ দিনের সূর্য
পায়ে পায়ে এভাবেই এগিয়ে চলে ডুয়ার্স মনোলোগ।