
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের হঠাৎ গ্রেপ্তারে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ‘নির্বিচার ধরপাকড়ের’ অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঘটনাটি শুধু একজন শিক্ষককে নিয়ে নয়, এটি একটি পরিবার, একটি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও একটি শিশুর মনোবিকাশের ওপর গভীর আঘাত।
মাহমুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গতকালের এক ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রাণ হারান ছমেস উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী। সেই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় মাহমুদুলকে। তবে সহকর্মীরা বলছেন, তিনি সেখানে ছিলেন না, কেবল ফেসবুকে ছাত্র অধিকার বিষয়ে কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন—যা তাকে ‘টার্গেট’ করার পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে।
তাঁর স্ত্রী মাসুবা হাসান বলেন, “আমার ছয় বছরের মেয়ে আজ সকাল থেকে শুধু একটাই প্রশ্ন করছে—‘আমার বাবা কী করেছে? পুলিশ ওকে কেন নিয়ে গেল?’ আমি তাকে কী বলব?”
এই প্রশ্ন শুধু এক শিশুর নয়, পুরো সমাজের—যেখানে মত প্রকাশ বা ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংবেদনশীলতা দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে।
শিক্ষক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। শিক্ষার্থীরা বলছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি মাহমুদুল হককে নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে তারা শ্রেণি কার্যক্রম, পরীক্ষা বর্জনের মত কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আজ একজন শিক্ষক, কাল আমরা। মুক্তচিন্তার জন্য শাস্তি হতে পারে না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এটা স্পষ্ট, প্রশাসন তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে পদক্ষেপ নিয়েছে।”
ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের সময় গণনা শুরু হয়েছে। জামিন, তদন্ত কমিটি ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষী প্রমাণের প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ করছে দেশের শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও মুক্ত পরিবেশকে।
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে হাজিরহাট থানা-পুলিশ। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।
তবে ছমেস উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তির কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে ছমেস উদ্দিনকে ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে লেখা আছে, ‘২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি সেখানে স্ট্রোক করে মারা যান—তা নিশ্চিত করেন প্রাইম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।’