
খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে খুলনা প্রেস ক্লাবে হাজির হন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে পূর্বঘোষণা ছাড়াই এ সফর এক ভিন্ন মোড় নেয়—কারণ প্রেস ক্লাব পরিদর্শনের সময় আন্দোলনকারীদের অঘোষিত ‘জবাবদিহির কাঠগড়ায়’ দাঁড়াতে হয় তাকে।
শনিবার বিকেলে খুলনা প্রেস ক্লাব চত্বরে শুরু হয় এই ঘটনাপ্রবাহ। দিনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলছিল, যেখানে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়।
প্রেস সচিব ক্লাবে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশ সেখানে এসে স্লোগান দিতে শুরু করে। স্লোগানে উঠে আসে একটাই দাবি—পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ।
বিক্ষোভকারীরা জানান, এই দাবির ব্যাপারে কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত প্রেস সচিবকে ক্লাব থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারে না, এবং প্রেস সচিবকে তাদের কথা পৌঁছে দিতেই হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, “আমরা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছি, অথচ সরকারের তরফ থেকে কেউ আসেনি। প্রেস সচিব এসেছেন, আমরা তাকে বলেছি, আমাদের কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দিন। না হলে এখান থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
প্রেস সচিব প্রাথমিকভাবে ক্লাবের ভেতরে অবস্থান করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। পরে তিনি নিজেই আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানান আলোচনার জন্য। সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বসে এই আলোচনা।
আলোচনার পর প্রেস সচিবের সঙ্গে থাকা জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, “আন্দোলনকারীরা আমাদের বিশ্বাস করে বলেছে, আমরা যেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের দাবি জানাই। এটা কোনো অবরোধ ছিল না, বরং একটি রাজনৈতিক চাপের ভাষ্য।”
তিনি আরও জানান, আন্দোলনকারীরা আগামী মাসব্যাপী কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের কথাও জানিয়েছেন এবং সেগুলোতে পরামর্শ ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থানের পর রাত ৮টা ৫ মিনিটে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশের নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে প্রেস সচিব ক্লাব ত্যাগ করেন। যদিও প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের ভাষ্য, এটি ছিল ‘নিয়মিত নিরাপত্তার অংশ’।
খুলনা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, “আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কেউই ক্লাব থেকে বের হতে পারেননি। প্রেস সচিবও তার ব্যতিক্রম নন।”