
নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খসড়া আচরণবিধিতে এমন কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে, যা নির্বাচনপূর্ব রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
প্রস্তাবিত নতুন বিধিমালায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে— প্রচারে পোস্টার ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা। এর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সময়ে পরিবেশদূষণ কমানোর পাশাপাশি খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি। পরিবর্তিত আচরণবিধিতে আরও বলা হয়েছে, প্রার্থীরা এখন আর নির্বিচারে বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবেন না। এসব প্রচারসামগ্রীর সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ বা সহায়তায় পরিচালিত কোনো প্রচার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে। একই সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারের বিষয়েও স্পষ্ট বিধি যুক্ত করা হয়েছে।
জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ আগের তুলনায় বহুগুণ বাড়ানো হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে এখন থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করেও প্রচার চালানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাইক ব্যবহারেও সীমাবদ্ধতা আনা হচ্ছে—শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল রাখা বাধ্যতামূলক হবে।
প্রার্থীদের ওপরও কিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেমন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকা কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সেই পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে প্রার্থী ও দলের অঙ্গীকারনামা। এতে উল্লেখ থাকবে যে, তাঁরা আচরণবিধি মেনে চলবেন।
ইসি এবার চায়, সব প্রার্থী যেন একটি অভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গণমাধ্যম আয়োজিত সংলাপে অংশগ্রহণ করতেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রচারে কী ধরনের বিধিনিষেধ থাকবে, তা খসড়ায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
সাংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ইসি ইতোমধ্যে ৩০০টি আসনের খসড়া সীমানা প্রকাশ করেছে এবং ৬০০টির বেশি দাবি-আপত্তি জমা পড়েছে, যেগুলোর শুনানি শেষে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।
এই খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।