০১ জুলাই ২০২৫ , ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ 

চাকরি ও প্রস্তুতি

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ ফাঁকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৩০ জুন ২০২৫

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ ফাঁকা

দেশের সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০-এ পৌঁছেছে। এটি মোট অনুমোদিত পদের ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারটি পদে একটি ফাঁকা রয়েছে। আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ২০২৪ সালের ‘সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন। ফলে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও জনসেবা খাতে চাপ বাড়ছে।

বিভিন্ন গ্রেডে শূন্য পদের চিত্র
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উচ্চ গ্রেড থেকে নিম্ন গ্রেড পর্যন্ত সব পর্যায়েই রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে শূন্যতা।

প্রথম থেকে নবম গ্রেড (পূর্বের প্রথম শ্রেণি): অনুমোদিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা ৬৮ হাজার ৮৮৪টি।

১০ থেকে ১২তম গ্রেড (পূর্বের দ্বিতীয় শ্রেণি): অনুমোদিত ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের মধ্যে কর্মরত ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেড (তৃতীয় শ্রেণি): ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি।

১৭ থেকে ২০তম গ্রেড (চতুর্থ শ্রেণি): মোট ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদের মধ্যে কর্মরত ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন, ফাঁকা ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি।

বিশেষ শ্রেণির পদ: ১৬ হাজার ১১৬টি পদের মধ্যে কর্মরত ৭ হাজার ৮৯০ জন, ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি।

নিয়োগ কাঠামো ও প্রক্রিয়া
প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদে নিয়োগের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। অন্যদিকে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ। তবে দুদিকেই রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা, যার কারণে বছর পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ সম্পন্ন হয় না।

কোন দপ্তরে কত পদ ফাঁকা?
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:

মন্ত্রণালয় ও বিভাগ: ৬ হাজার ৬৪টি পদ শূন্য।

অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর: ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ শূন্য।

বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়: ১৫ হাজার ২৯টি পদ খালি।

স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশন: ১ লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ ফাঁকা।

বছরওয়ারি শূন্য পদের ধারাবাহিকতা
গত ছয় বছরেও এই সংকট কাটেনি, বরং বেড়েছে:

২০১৮: ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭

২০১৯: ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮

২০২০: ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫

২০২১: ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫

২০২২: ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬

২০২৩: ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১

সংকটের প্রভাব ও বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপুল শূন্যতা শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাকেই দুর্বল করে তুলছে না, একই সঙ্গে নাগরিক সেবা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নাগরিকেরা বিভিন্ন দপ্তরে গেলে সময়মতো সেবা পাচ্ছেন না, ফাইলের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে, আর মাঠপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা হচ্ছে ধীরগতির।

কী করতে হবে?
প্রশাসনিক বিশ্লেষক ও মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করে পিএসসি ও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক নিয়োগব্যবস্থায় ডিজিটাল সহজীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি, জনবল চাহিদা ও কাঠামোগত সংস্কার জরুরি হয়ে উঠেছে।

সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের এই প্রবণতা একদিকে বেকার শিক্ষিত তরুণদের হতাশ করছে, অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ফেলছে অকার্যকারিতার ছাপ। এখন প্রয়োজন দ্রুত, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী নিয়োগ প্রক্রিয়া, নইলে শূন্যতা থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশাসনিক অচলাবস্থায় পৌঁছাতে পারে সরকার কাঠামো।