
জুলাই আন্দোলনের ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ নিয়ে মুখ খুলেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বলেছেন, “প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র-জনতার।”
শুক্রবার ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে এ বিষয়ে চলমান রাজনৈতিক আলাপে অংশ নিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা।
‘মেটিকুলাস ডিজাইনে সমস্যা কোথায়?’
এ বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা লিখেছেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দুটি অংশ। ৫ জুন থেকে ১৮ জুলাই। এ অংশে অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিল। আর ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল স্তরের ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এবং আত্মদানে অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র-জনতার।”
অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না থাকলে এ বিপ্লবী জনতা পরের অংশে লক্ষ্যে পৌছাতে পারত না মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, “শুক্রবার দিবাগত রাত, ২ আগস্টে এ অভ্যুত্থান বেহাত হয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের দিকে মোড় নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা ঠেকাতে পেরেছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব।”
অতীতে বাংলাদেশের অনেক গৌরবময় আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ কাজ করেছিল বলে দাবি করেন মাহফুজ।
তিনি বলেছেন, “পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে মেটিকুলাস ডিজাইন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান আর ৭১ এর মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙ্গালি-বিহারি দাঙ্গা সঠিক হইতে পারলে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান মেটিকুলাস ডিজাইন হইলে সমস্যা কোথায়?”
“দুনিয়ার কোন অভ্যুত্থান বা বিপ্লব পরিকল্পনা না করে হয়েছে? জনগণের চৈতন্যকে ঐক্যবদ্ধ ও লক্ষ্যাভিমুখী রাখতে মেটিকুলাস ডিজাইনের বিকল্প নেই। যখন জনগণ নেতৃত্ব ও বক্তব্য পেয়ে যাবে এবং বিপ্লবের অবজেক্টিভ কন্ডিশন প্রস্তুত, তখন আর প্ল্যানের দরকার পড়ে না। কিন্তু, তার আগে রাজনৈতিকভাবে জনগণকে প্রস্তুত এবং বিপ্লবী করে তোলা মেটিকুলাস ডিজাইন হলে সমস্যা কোথায়?”
এই ধরনের ডিজাইন বা পরিকল্পিত আন্দোলনের জন্য গর্ব বোধ করার কথা তুলে ধরে মাহফুজ লিখেছেন, “সিরাজুল আলম খান, তাজউদ্দিন, সিরাজ শিকদার আর ভাসানী, এমনকি খোদ শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানকে পরাজিত করতে মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ হয়ে পাপবোধ না করেন এবং আমরা তাদের নিয়ে (তাদের ভুলসহই, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য) গর্বিত হতে পারি, তাহলে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে মেটিকুলাস ডিজাইন করে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করলে কেন এ প্রজন্ম গর্বিত বোধ করবে না?”
আন্দোলনের সঙ্গে বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততা ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।
ফেইসবুকে মাহফুজ লিখেছেন, “৩ তারিখের ১ দফা ঘোষণার আগে জাতিসংঘের বক্তব্য ছাড়া বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনী কারোরই বিন্দুমাত্র অংশগ্রহণ ছিল না এ গণ-অভ্যুত্থানে। ভারতের সাথে ষড়যন্ত্র করে (যা ন্যায্য বলেই আমরা মনে করি) আগরতলা বৈঠক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শেখ মুজিব ও অন্যান্য জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি যদি আমাদের শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে কোনো বিদেশি শক্তি বা তৃতীয় শক্তির সাথে ষড়যন্ত্র কিংবা সলা-পরামর্শ ছাড়াই জনগণের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার জন্য অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ এবং অংশীজনকে কেন গালি শুনতে হবে?”
“মওলানা ভাসানীর ৬৮ সালের ঘেরাও আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখেন, অথবা ৭১ এর মার্চ। আপনারা মেটিকুলাস ডিজাইনও বুঝতে পারবেন এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ আর বিপ্লবী তৎপরতারও হদিস পাবেন,” লিখেছেন তিনি।
গত বছরের জুলাই মাসে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দেওয়া এক বক্তব্যে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সেই আন্দোলনের সূত্র ধরেই আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
জুলাই আন্দোলনকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বর্ণনা করতে ইউনূসের সেই ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকেন দেশের বাইরে অবস্থানরত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা।