০৩ জুলাই ২০২৫ , ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ 

জাতীয়

এনবিআর আন্দোলনের পর ৪ কর্মকর্তাকে একযোগে অবসর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২০:২২, ২ জুলাই ২০২৫

এনবিআর আন্দোলনের পর ৪ কর্মকর্তাকে একযোগে অবসর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তিনজন শীর্ষ সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। চাকরির বয়সকাল ২৫ বছর হওয়ায় বুধবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদের অবসরে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২৫ বছরের চাকরিজীবন পূর্ণ করায় ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী তাদের ‘জনস্বার্থে’ অবসরে পাঠানো হয়েছে। তবে এই চার কর্মকর্তা হলেন— মো. আবদুর রউফ (সদস্য, ভ্যাট নীতি), হোসেন আহমদ (সদস্য, কাস্টমস পলিসি ও আইসিটি), মো. আলমগীর হোসেন (সদস্য, আয়কর), মো. শব্বির আহমেদ (কমিশনার, বরিশাল কর অঞ্চল)।

আগের দিন মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক কমিশনারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে সাময়িক বরখাস্তের মধ্যে এবার চারজনকে অবসরে পাঠানোর আদেশ এল।

‘জনস্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রশাসনিক মহলে এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এটি এনবিআর-ভিত্তিক সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যদিও সরকার বলছে অবসরের কারণ প্রশাসনিক এবং আইনি, তবে সচেতন মহল ও অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘সিগন্যাল’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এনবিআরের মধ্যে ক্ষোভের আগুন যেন আবার না জ্বলে ওঠে, সে লক্ষ্যে শক্ত বার্তা দেওয়ার কৌশল হিসেবেই এ পদক্ষেপ।

গত মে মাসে মাঝরাতে অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ—রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠন করা হয়। এতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে জুন মাসজুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। culminating point আসে জুনের শেষ সপ্তাহে, যখন পুরো এনবিআরের কার্যক্রম বন্ধ করে ‘Complete Shutdown’ পালন করা হয়। এতে রাজস্ব আহরণ, পণ্য খালাসসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়।

সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়—এনবিআরের সব কার্যক্রম ‘অপরিহার্য সেবা’ হিসেবে ঘোষণা করে কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়। পরে, আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের একটি অংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও চাপের মধ্যে ছিলেন এনবিআরের শীর্ষ স্তরের কর্মকর্তারা।

প্রথম দফায় মে মাসে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব ও নীতি বিভাগ আলাদা করার অধ্যাদেশের সময় আন্দোলনে নামেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। তখন সরকার এ থেকে পিছু হটে অধ্যাদেশ স্থগিত রেখে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সংস্কার কাজ চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর এনবিআরের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের টানা এক সপ্তাহের কর্মসূচির মধ্যে শনিবার থেকে দেশের কাস্টম ও ভ্যাটের দপ্তরে লাগাতার 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি আসে।

এ কর্মসূচি চলতে থাকলে দ্বিতীয় দিন রোববার নড়েচড়ে বসে সরকার। এনবিআরের সেবা ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে আন্দোলনরতদের কাজে যোগ দিতে কঠোর হুঁশিয়ারি আসে।

এরমধ্যেই আন্দোলনরত ছয় এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় দুদক।

আগের সূচি অনুযায়ী সেদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তাতে বসতে চাননি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কমপ্লিট শাটডাউন চালু রাখা অবস্থায় তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা জানান।

এরমধ্যে সংকটের সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।

দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পরে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র। ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।

ওই দিন রাত থেকেই কাস্টম হাউজ খুলে দেওয়া হয়; সোমবার থেকে কাজেও ফেরেন সকলে। তবে বদলি, মামলা ও বরখাস্তের আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মধ্যে।