
বাংলাদেশে সরকারি সেবা পেতে গিয়ে এখনও ব্যাপক সংখ্যক নাগরিককে ঘুষ দিতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি অফিসে দুর্নীতি ও হয়রানির মাত্রা কতটা ভয়াবহ, তা উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (CPS)’-তে।
আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। জরিপটি ফেব্রুয়ারি মাসে পরিচালিত হয়, যাতে অংশ নেয় ৪৫,৮৮৮টি খানার মোট ৮৪,৮০৭ জন নারী ও পুরুষ।
ঘুষের শীর্ষে বিআরটিএ
জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণকারী নাগরিকদের মধ্যে ৩১.৯৩ শতাংশ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন বা দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছেন। অর্থাৎ, প্রতি তিনজনের একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে সরকারি কোনো না কোনো সেবা নিতে গিয়ে।
এই তালিকায় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
জরিপ অনুসারে, বিআরটিএ থেকে সেবা নেওয়া নাগরিকদের মধ্যে ৬৩.২৯ শতাংশই ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
দুর্নীতির এই তালিকায় এরপর রয়েছে—
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা: ৬২.৯৪%
পাসপোর্ট অফিস: ৫৭.৪৫%
ভূমি নিবন্ধন অফিস: ৫৪.৯২%
নিরাপত্তাহীনতায় নারীরা
জরিপে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে মতামতও উঠে এসেছে।
৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, তাঁরা সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন।
তবে নারী-পুরুষের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে:
৮০% নারী নিজেদের এলাকাতে সন্ধ্যায় একা চলতে নিরাপদ মনে করেন, অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন নারীর একজন নিরাপত্তাহীন বোধ করেন।
বিপরীতে, ৮৯.৫৩% পুরুষ একা চলাফেরায় নিরাপদ অনুভব করেন।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত
রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার সম্পর্কেও হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে জরিপে।
শুধু ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাঁরা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পারেন।
বৈষম্য ও হয়রানির শিকার
গত এক বছরে দেশের ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এ ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে উঠে এসেছে।