
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রায় এক দশক কারাভোগের পর, মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাকে সকল অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড এবং ২০১৯ সালের আপিল রায় উভয়ই বাতিল হলো।
২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল রংপুরে গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রাখে। কিন্তু নতুন করে আপিল বিভাগে মামলাটি দ্বিতীয়বার শুনানির পর, বিচারপতিরা মত দেন যে, পূর্ববর্তী আপিল রায়ে মামলার তথ্য-প্রমাণ “সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি”।
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উল্লাস প্রকাশ করেন আজহারের আইনজীবীরা। শোনা যায় ‘নারায়ে তাকবির’ ধ্বনি। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. শিশির মনির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে, সত্য কখনও চাপা থাকে না। মিথ্যা অভিযোগ শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই রায় এমন এক সময় এল, যখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। গত জুলাইয়ের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটিই প্রথম এমন একটি রায়, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পূর্বের রায় পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছে।
এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন — মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত কারও রিভিউ শেষে আপিলে সম্পূর্ণ খালাস পাওয়া এটাই প্রথম ঘটনা।
বিশ্লেষকদের মতে, এ রায় দেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার ব্যবস্থাকে নতুন করে মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সামনে নিয়ে আসবে। অনেকেই বলছেন, এই রায়ের ফলে আরও কিছু মামলার পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, আজহারের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কারাগার কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে রায় প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে।